জিম্বাবুয়েকে বিশাল রানে হারালো বাংলাদেশ


তারেক আজিজ প্রকাশের সময় : ০২/০৩/২০২০, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ /
জিম্বাবুয়েকে বিশাল রানে হারালো বাংলাদেশ

বাংলাদেশের দেয়া ৩২১ রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে শুরুতে উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ওপেনার তিনাশি কামুনহুকামুয়ে (১) ফেরেন দলীয় এক রানে। এরপর আবারও আঘাত হানের তিনি। প্রথমে আম্পায়ন আউট না দিলেও রিভিউতে উইকেট পায় বাংলাদেশ। এলভি হয়ে ১১ রানে ফিরে যান রেগিস চাকাবাহ। 

এরপর মাশরাফির আঘাত। ১০ রানে ফিরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক চামু চিবাবাকে। এরপর ১৪তম ওভারে বল করতে এসে ২য় বলেই ৮ রানে ব্যাট করা ব্রেন্ডন টেইলরকে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে সিকান্দার রাজাকে সঙ্গে নিয়ে ওয়েসলি মাধেভারের ৩৫ রানের জুটি গড়েন।

তবে ২৩তম মোস্তাফিজুর রহমান সিকান্দার রাজাকে (১৮) তুলে নিলে ভাঙে এই জুটি। দলীয় ৭৯ রানে রোডেশিয়ানদের ৫ম উইকেটের পতন ঘটে। পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে কাটা পড়েন ওয়েসলি মাধেভারের। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৩৫ রান।

এরপর ১৭ রান করে রান আউট হন রিচামন্ড মুতোমবোদজি। ২ রান করে মিরাজের বলে ফিরে যান ডোনাল্ড তিরিপানো। এরপর আবারও সাইফউদ্দিনের আঘাত। ফিরিয়ে দেন ১৩ রান করা কার্ল মুম্বাকে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন টিনোটেন্ডা মুতোমবোদজি। মাশরাফির বলে আউট হবার আগে ২৪ রান করেন তিনি। সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৯.১ বলে ১৫২ রান করে জিম্বাবুয়ে দল। এতে ১৬৯ রানের জয় বিশাল পায় বাংলাদেশ। এ জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিজেদের ইতিহাসের ৮ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান তোলে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান আর তাতেই জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২২ রানের।  টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লে’তে দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস সাবধানী সূচনা করেন।

প্রথম দশ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৪ রান। এরপর কিছুটা হাত খুলে খেলতে থাকেন তামিম। তবে ইনিংসের ১৩তম ওভারের ৪র্থ বলে ওয়েসলি মাধেভারের বলে এলবিডাব্লিউ’র শিকার হয়ে ফিরতে হয় তামিমকে। অবশ্য এর আগে ১২তম ওভারের শেষ বলে কার্ল মুম্বার বলেও এলবিডাব্লিয়ের আবেদন উঠেছিল তামিমের বিপক্ষে। তবে আম্পায়ার নট আউট বললে রিভিউ নেয়নি জিম্বাবুয়ে।

পরবর্তীতে রিপ্লে’তে দেখা যায় নিশ্চিত আউট থেকেই বেঁচে গেলেন তামিম। দলীয় ৬০ রানে আউট হওয়ার আগে তামিম ৪৩ বল খেলে ২টি চারে করেন ২৪ রান। তামিম ফিরলে উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন দাসের সঙ্গে গড়লেন ৮০ রানের ঝড়ো জুটি। তবে দলীয় ১৪০ রানে ইনিংসের ২৬তম ওভারের ৪র্থ বলে টিনোটেন্ডা মুতোমবোদজি শিকার হয়ে ফেরেন শান্ত।

আউট হওয়ার আগে নামের পাশে এক চার দুই ছয়ে ৩৮ বলে ২৯ রান যোগ করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতক পূর্ণ করেন লিটন দাস। এটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার প্রথম শতক এবং ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন এই ওপেনার। শতক তুলে নিতে লিটন খেলেন মাত্র ৯৫টি বল। লিটনের শতক পূর্ণ হতেই প্যাভিলিয়নের পথে পা মাড়ালেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।

দলীয় রান তখন ১৮২ আর মুশির নামের পাশে ২৬ বলে মাত্র ১৯ রান। ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি পুল করতে গেলে বল মিস হয়ে সোজা এসে লিটনের হেলমেটে লাগে। এরপর থেকেই অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন এই ওপেনার। তবে তারপরেও এক ওভার মাঠে ছিলেন। পরের ওভারে ওয়েসলি মাধেভারের বলে ছক্কা হাঁকানোর পর আর মাঠে থাকতে পারেননি লিটন।

১০৫ বলে ১৩টি চার আর ২টি ছয়ে ১২৬ রান করে রিটায়ার্ড হয়ে ফিরে যান লিটন। লিটন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরলে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। চতুর্থ উইকেটে রিয়াদের সঙ্গে গড়েন ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে রাখেন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে ক্রিস এমপফুর বলে এলবিডাব্লিউ’র শিকার হয়ে রিয়াদ ফেরেন দলীয় ২৭৪ রানে।

এর আগে রিয়াদ ২৮ বলে ২টি চার এবং ১টি ছয়ে ৩২ রান করেন। শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিং করে অর্ধশতক তুলে নেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে ফিফটি হাঁকানোর পরেই এমপফুর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন মিঠুন। দলীয় ২৮৯ রানে ব্যক্তিগত ৪১ বলে ৫০ রানে ফেরেন মিঠুন। মিঠুনের ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে ছিল একটি ছয়ের মারও।

শেষ দিকে মিরাজের ৭ আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ১৫ বলে ২৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৩২১ রানে। জিম্বাবুয়ের হয়ে দু’টি উইকেট নেন ক্রিস এমপফু আর একটি করে উইকেট তুলে নেন টিনোটেন্ডা মুতোমবোদজি, ডোনাল্ড তিরিপানো, ওয়েসলি মাধেভার এবং কার্ল মুম্বা।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: চামু চিবাবা (অধিনায়ক), তিনাশি কামুনহুকামুয়ে, ব্রেন্ডন টেইলর, সিকান্দার রাজা, রেগিস চাকাবাহ, রিচামন্ড মুতোমবোদজি, টিনোটেন্ডা মুতোমবোদজি, ডোনাল্ড তিরিপানো, এইন্সলে এনদলোভু, ক্রিস এমমফু এবং কার্ল মুম্বা।