নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে একের পর এক হিন্দি গানে নৃত্য পরিবেশন চলছে। পেছনে বসে আছেন অতিথিবৃন্দ। সেই নৃত্য আবার লাইভে প্রচার করা হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ফেসবুক আইডি থেকে।
শানিবার (২৬ মার্চ) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে এমনভাবেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের আইডি থেকে এসব লাইভ ভিডিও ডিলেট করা হয়েছে। ভারতীয় হিন্দি গানের তালে নৃত্য উপভোগ করেন, জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান, সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসের মতো এমন আয়োজনে ভারতীয় হিন্দি গানে সাথে নৃত্য পরিবেশন করা স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা ও অনৈতিক বলে মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক।
তিনি বলেন, ভিডিওটি দেখার পর খুবই কষ্ট পেয়েছি। একজন জেলা পরিষদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এসব কেমন করে হতে পারে? তাদের উচিত ছিল জাতীয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করা। ভারতীয় হিন্দি গানে নাচ করা বা করতে দেওয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে স্বাধীনতার প্রতি উদাসীন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে বাদই দিলাম, অন্তত একজন শিক্ষক বা আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তার উপস্থিতিতে এমন ঘটনা কাম্য নয়। এ সবের কারণে তরুণ প্রজন্ম দিন দিন মহান স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজ শিক্ষার্থী নিসান আলী বলেন, আমরা অবাক হয়েছি! হিন্দি গানের সাথে নাচের ভিডিও আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের আইডিতে লাইভ করা হয়েছে। ৭টি গান শেয়ার করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি গম্ভীরা ও দেশাত্ববোধক, বাকিগুলো সব হিন্দি গানের নাচ। নূন্যতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলে এসব হয় না। এসব থেকে তরুণ প্রজন্ম কী শিখবে? এমন গর্হিত কাজের জন্য আয়োজকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
জানা যায়, পরপর কয়েকটি হিন্দি গানে নাচ করে স্থানীয় কয়েকজন তরুণী ও শিশু। এ ছাড়া গম্ভীরা গান, দেশাত্মবোধক গানের আয়োজন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
এ বিষয়ে সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন স্কুল কর্তৃপক্ষ করলেও বিকেলে স্থানীয় যুবকরা গান-বাজনা করে। তাদের মাঝে যাতে কোনো জামেলা না হয়, তাই আমরা উপস্থিত ছিলাম। স্থানীয় ছেলেরাই হিন্দি গানে নাচ করেছে। দিনব্যাপী নানা আয়োজন ও দেশাত্মবোধক গানেরও অনুষ্ঠান হয়েছে।
নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভ ভিডিও আপলোড করার বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটের সময় এক ছেলে আমার ফেসবুক আইডি নেয়। তখন থেকে সে-ই আমার ফেসবুক চালায়। আমি ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করার বিষয়ে জানি না। এমনকি এখন পর্যন্ত ভিডিও দেখিনি।
জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, দুই শিশু ও একজন ১৩-১৪ বছরের কিশোরী হিন্দি গানে নাচ করেছিল। কিন্তু সেখানে কোনো অশ্লীলতা বা নোংরামি ছিল না। তবে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় হিন্দি গানের নৃত্য করা ঠিক হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান রোববার (২৭ মার্চ) রাতে মুঠোফোনে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। তবে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হিন্দি গানে নাচ করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :