সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ফাঁদ


তারেক আজিজ প্রকাশের সময় : ২১/০৩/২০২১, ৩:২১ অপরাহ্ণ /
সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে ১০ পরিবার। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সহজ-সরল মানুষের প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ভুক্তভোগীদের রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্নকে পুঁজি করেই সক্রিয় হয় এসব চক্র। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটি, নতুনহাট, চর মোহনপুর ও টিকরামপুর এলাকার ৫০টি পরিবার জমানো টাকা হারিয়ে সর্বশান্ত। কয়েকটি পরিবার আবার ধারদেনা করেও চক্রটিকে টাকা দিয়েছে। এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে নিরক্ষর, অসচেতন মানুষ তাদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা হারিয়েছেন। প্রায় ৫০ জন এ চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ চক্রের দালালরা প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা। কখনো গুপ্তধন, কখনো মাউড়িদের জমানো শত কোটি টাকা আবার কখনো বিদেশী দাতা সংস্থার সহায়তার অর্থ পাইয়ের দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। এভাবে এলাকার সহজ-সরল মানুষ প্রতারকদের কথায় মুগ্ধ হয়ে তাদের ফাঁদে পড়েন। গত দুই বছরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। এ ঘটনায় ৯ মার্চ ৭১ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। এজাহারে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি সদর মডেল থানার ওসিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক। ১১ তারিখ মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়েছে। মামলা হওয়ার পর থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য বিউটিসহ আরও কয়েকজন প্রতারক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্য বিউটি বাড়িতে তালা দিয়ে স্ব-পরিবারে পালিয়েছেন।

মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। প্রতারকরা নিজেদের ব্যাংক পরিচালক, কখনো সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কখনো বিদেশী দাতা সংস্থার প্রতিনিধি কখনো পুলিশ কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। গুপ্তধনের সন্ধান দিয়ে অনেককে কোটিপতি বানিয়েছেন এমন প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রটি। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই। মূলত সারাদেশেই এই চক্রের একাধিক নেটওয়ার্ক আছে। যারা শতাধিক মানুষকে পথে বসিয়েছে। মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা।

ভুক্তভোগিরা বলছেন- প্রতারণার টাকায় আজ কোটিপতি এ মামলার প্রধান আসামি রেজাউল ইসলাম রেজা। প্রতারণা মামলার প্রধান আসামি রেজা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চর মোহনপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত নৈয়মুদ্দিন মাস্টারের ছেলে। এ মামলার ২ নং আসামি মোসা. বিউটি। তিনি চর মোহনপুর জামাইপাড়ার মো. আনারুল ইসলামের মেয়ে। বিউটির বাবা আনারুল ইসলাম, মা সেমালী বেগম, চর মোহনপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত বাক্কার মেম্বারের ছেলে কাবির, মৃত মুনসুর মাস্টারের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা মিজান ও জেসি নামে এক নারীকে আসামি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী দুরুল জানান, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে প্রতারক সিন্ডিকেটের সদস্য বিউটির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর থেকেই বিউটি তাকে বিপুল পরিমাণ টাকা আর সম্পদের প্রলোভন দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ওই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে যান। প্রবাসে থাকা দুই ছেলের উপার্জিত অর্থ একাধিক এনজিও থেকে ঋণ আর ধারদেনা করে ৭১ লাখ টাক হারিয়ে এখন সর্বশান্ত। প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করে তিনিই এখন বিপাকে। তার দাবিÑ আসামিদের পক্ষ থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ চক্রটি এতো শক্তিশালী যে, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও তিনি সন্দিহান। দুরুলের দাবি- মামলা দায়েরের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরসহ অনেকেই তাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।

মামলার এজাহারনামীয় ৫ নং আসামি মিজানুর রহমান জানান, বাদী আমার দুলাভাই। শুনেছি ধারদেনা করে কোথাও টাকা দিয়েছেন। কাকে টাকা দিয়েছেন এটা পরে শুনেছি। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এ মামলার ১ নং আসামি রেজাউলের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। আমার দুলাভাই এ বিষয়টির মীমাংসার জন্য আমাকে বলেছিলেন। আমি পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এ উদ্যোগ নিতে পারিনি। সেই ক্ষোভেই হয়তো আমাকে আসামি করা হয়েছে। প্রতারণার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত নয়।

মামলার আইনজীবী শফিক এনায়েতুল্লাহ বলছেন, প্রতারকরা পার পেয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করেই প্রতারণা করে। ফলে আদালতে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত ছাড়া এসব মামলার আসামিদের শনাক্ত করা কঠিন। পুলিশ চাইলে এ মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সোহেল রানা জানান, এ মামলাটি তদন্তাধীন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com