বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রয়োজন ‘সম্মিলিত প্রতিরোধ’


তারেক আজিজ প্রকাশের সময় : ১৭/০১/২০২১, ৯:০৩ অপরাহ্ণ /
বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রয়োজন ‘সম্মিলিত প্রতিরোধ’

ফারুক আহমেদ চৌধুরী:
বাল্যবিয়ে, প্রথমত মেয়েশিশুর জন্য অধিকার লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত, এটি নির্যাতন। সর্বোপরি, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ও আইনগত অপরাধ। প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা লাভের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ১৮ বছরের আগে একটি মেয়ে কখনও পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে না। বাল্যবিবাহ সংকুচিত করে দেয় নারীর পৃথিবী। সামাজিক সচেতনতা আর সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর প্রতিরোধই কেবল বাল্যবিবাহ রোধ করে অধিকারসচেতন নারী কিংবা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। আমাদের অঙ্গীকার ও উদ্যোগই পারবে মেয়েশিশুর জন্য একটি বৈষম্যমুক্ত, মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনায় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেনÑ বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ অভিভাবকদের মানসিকতা। মা-বাবা যত দিন বুঝবেন না যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে তার বিরাট ক্ষতিসাধন করা হয়, তত দিন বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন। তাই পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সামাজিক আন্দোলনে সেগুলো অর্জন সম্ভব।
ইউনিসেফের বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, সম্প্রতি বাল্যবিবাহ অত্যন্ত ভয়াবহ একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ বলতে বাল্যকাল বা নাবালক বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিবাহকে বোঝায়। ছেলে-মেয়ে উভয়ের বা একজনের বয়স নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম বয়সে হলে তা আইনে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত। বাল্যবিবাহ নামের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার কাজটি যে খুব কঠিন। এই সমাজের অত্যন্ত গভীরে বাসা বেঁধে আছে এই ব্যাধি। এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন শিবগঞ্জের সাংসদ ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম তাজকির উজ-জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রুহুল আমিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম। স্বাগত বক্তব্যে বাল্যবিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট মো. জাকিউল ইসলাম।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, এনডিসি রবিন মিয়া, বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষক, অভিভাবক, নিকাহ রেজিস্ট্রার, ঈমামসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সবাই ‘বাল্য বিয়েকে না বলি’ লিখিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সভায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ। একই মঞ্চে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যটন গাইডের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এর আগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার। বিকেলে প্রধান অতিথি ওয়াহিদা আক্তার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোল সম্প্রদায়, হিজড়া ও শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com