চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ
তারেক আজিজ
প্রকাশের সময় : ২৯/০৩/২০২১, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ /
০
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলস ইউনিট কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। এমনকি গত ৫ বছর আগেই তাকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি। এসময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তার নামে হওয়া গেজেটও স্থগিত রেখেছে। তারপরেও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও পরিচয় দানকারী ব্যক্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত মোসাহাক মন্ডলের ছেলে মো. তাইফুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সীধান্ত অনুযায়ী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে জেলা ইউনিট কমান্ডার সাক্ষরিত পত্র সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দানকারী তাইফুর রহমান একজন রাজাকার। ২০১৬ সালের ০৯ মার্চ ইস্যু করা পত্রে উল্লেখ করা হয়, এসএসসি সনদ অনুযায়ী তাইফুর রহমানের জন্ম তারিখ ১৯৭১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স থাকতে হবে ন্যূনতম ১৩ বছর। অথচ সেসময় তার বয়স দুই বছর ছিলো। বিভিন্ন অপকৌশলে ৪০ বছর পর ২০১০ সালে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন তাইফুর রহমান। এছাড়া এলাকার অনেকেই রাজাকার হিসেবে চেনেন তাকে। ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে তার নাম বাদ যায় এবং গেজেট নম্বরও স্থগিত করে মুক্তিযুক্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতকিছুর পরেও ৫ বছর পার হয়ে গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা তকমা লাগিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ তাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চন্ডীপুর গ্রামে কৃষি জমি রয়েছে সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তার। তার তার জমির ২ হাজার ফিট দূরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। বিএমডিএ’র গভীর নলকূপের ড্রাইভার মো. মজিবুর রহমান বলেন, সীমানার মধ্যে না থাকা স্বত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে জোরপূর্বক পানি দিয়ে নিজের জমির চাষাবাদ করাচ্ছেন তাইফুর রহমান। কিছুদিন থেকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। তাই এখন প্রয়োজন পুনরায় আরো গভীর করে পাইপ বসানো। এটির বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে তাইফুর রহমান। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ড্রাইভার থেকে বাদ দেয়াসহ নানা হুমকি দেয় তিনি। পরে নিজেই হয়রানি করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। এমনকি মামলার কপিতেও নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তাইফুর রহমান।
এবিষয়ে সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, তাইফুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং তিনি একজন রাজাকার। ২০১৬ সালে তালিকা থেকে বাদ পড়াও এখনো মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার শামিল ও অন্যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাচোল থানার এসআই গোলাম রসুল বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। কয়েকজন আসামী আত্নসমর্পণ করেছেন। তদন্ত শেষে আদালত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এবিষয়ে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা তাইফুর রহমান। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Post Views: 1,717
আপনার মতামত লিখুন :