চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম, চিকিৎসা করাতে পারছেন না রাজমিস্ত্রি বাবা


Journalist Tarek Aziz প্রকাশের সময় : ১৮/০২/২০২২, ৫:৫৫ অপরাহ্ণ /
চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম, চিকিৎসা করাতে পারছেন না রাজমিস্ত্রি বাবা

বিয়ের ৪ বছরে কোনো সন্তান না হওয়ায় চিন্তিত ছিলেন মাসুদ-তাজরিন দম্পতি। সন্তানের আশায় শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। অবশেষে তাদের ঘর আলো করে এসেছে তিন ফুটফুটে সন্তান। সন্তানদের আগমনে পরিবারে বাড়তি আনন্দ থাকলেও তাদের লালন-পালন ও চিকিৎসার খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজমিস্ত্রি বাবা।

ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের নতুনহাট-হেলালপুর মহল্লায়। ওই এলাকার আনসার আলীর ছেলে দিনমজুর মাসুদ রানা (৩২) ও তার স্ত্রী মোসা. তাজরিন খাতুন (২২) দম্পতি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম দিয়েছে। ১৫ জানুয়ারি সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীর আমেনা হাসপাতালে তিন সন্তান প্রসব করেন তাজরিন।
সন্তান মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ও জন্মদানের পর তাদের চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। এতে তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পরিবারটি। তিন সন্তানকে নিয়ে মা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোশংকরবাটি-নতুনপাড়া মহল্লায় বাবার বাড়িতে রয়েছেন।

মাসুদ রানা বলেন, গর্ভধারণের তিন মাসে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানতে পেরেছিলাম আমাদের ৩ সন্তান হবে। জন্মের সময় প্রচুর পরিমাণে রক্ত ও স্যালাইন লেগেছে। হাসপাতালে বাচ্চা জন্মদানের পর ৪ দিন থাকাসহ খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগে বিভিন্ন চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাজারের কেনা দুধ খাওয়াতে হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ আমি। এত টাকা কোথায় পাব, সে চিন্তা করে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না।

মা তাজরিন খাতুন জানান, তিন সন্তানের নাম রাখা হয়েছে। প্রথম ছেলে সন্তানের নাম তৌসিফ আহমেদ মাহাদীন, দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া আক্তার মাসুমা ও তৃতীয় মেয়ে তাবাসসুম আক্তার মালিহা। এখন তারা সবাই মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। তবে দ্বিতীয় সন্তান তাসফিয়া আক্তার মাসুমার কিছু সমস্যা রয়েছে। তার ওজন বাকি দুইজনের থেকে কম। সব সময় কান্না করে এবং দুধ খেতেও পারে না।

তিনি আরও জানান, একেকটা দুধের কোটা ৭ দিন যায়। এখন যত বড় হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই তাদের দুধ খাওয়ার পরিমাণ ও খরচ দুটোই বাড়ছে। জন্মদানের পর বাসায় নিয়ে আসার পরে ঠান্ডা লেগে যায়। পরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। তাদের এখন ভালো চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে ভালো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে পারছি না।

তাজরিনের মা মেরিনা বেগম বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও আমার স্বামী অটো চালায়। আমার তিনটিই মেয়ে। তাজরিন তাদের মধ্যে সবার ছোট। নাতি-নাতনিদের সবসময় ঠান্ডা লেগেই থাকছে। তাদের ভালো চিকিৎসা দরকার। স্বামীর অটো চালানোর এত কম আয় দিয়ে কিছু করতে পারি না। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে সাহায্যের জন্য গেছিলাম। তিনি বলেছেন, এসব সাহায্যের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তাছাড়া আইডি কার্ড না থাকলে কিছু করা যাবে না। অনেক কষ্টে মেয়ের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বৃহস্পতিবার হাতে পেয়েছি।

প্রতিবেশী খাইরুন নেসা বলেন, তিনটা বাচ্চার দেখাশোনার জন্য তিনজন লোক লাগছে। মা-মেয়ে সন্তানদের নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকছে। বাড়ির কাজ করতে পারছে না। এমনকি রাতেও তাজরিন ঘুমাতে পারে না। কারণ কে কখন জেগে উঠছে ঠিক নেই। টাকার অভাবে বাচ্চাদের ভালো চিকিৎসা করাতে পারছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হাই বলেন, আমি মাত্র কিছু দিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। তাই এসব অসহায়, দরিদ্র মানুষকে সাহায্যের বিষয়ে কয়েকজন সাবেক কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তারা জানিয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া পৌরসভা থেকে কোনো সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, শিশুর জন্মের পর মায়ের দুধের বিকল্প নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে তা একটি শিশুর জন্য পর্যাপ্ত। কিন্তু একসঙ্গে তিন শিশু হলে মায়ের দুধে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে বঞ্চিত হয় শিশুরা। এতে তাদের মাঝে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই বাজারে পাওয়া যায় এমন কৃত্রিম দুধে চাহিদা মেটাতে হয়।

একসঙ্গে তিন শিশুর লালন-পালন করা অনেক কঠিন ও ব্যয় সাপেক্ষ মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজমিস্ত্রি বাবার পক্ষে এত ব্যয় করা কষ্টকর। তাদের পাশে দাঁড়াতে এই তিন সন্তানের সব চিকিৎসা বিনামূল্যে করব। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ম্যাক্স হাসপাতালে তাদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই এমন অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার নির্দেশনায় সারাদেশে অসহায়, বিপদগ্রস্ত মানুষকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়। পরিবারটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা বা সদর উপজেলায় সাহায্যের আবেদন করলে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com