নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেই অর্থ সংকটে বন্ধ করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিট। গত ৩ মাস ধরে চলা করোনা ইউনিট হঠাৎ বন্ধ হওয়ার কারন হিসেবে অর্থ সংকটকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত রবিবার (০৪ এপ্রিল) করোনা ইউনিটে যে দুইজন ভর্তি ছিলেন, তাদেরকেও রেফার্ড করা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে রোগী শূন্য করে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে করোনা ইউনিটের। সোমবার (০৫ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ৫ম তলায় করোনা ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জানা যায়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ধাপে হাসপাতালের ৭ম তলায় চালু হয় করোনা ইউনিট। চালুর পর হতে ডাক্তার-নার্সদের থাকা, খাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা দিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। গত ৩ মাসে ডাক্তার-নার্সদের বিভিন্ন সুবিধা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন, নতুন বেড স্থাপনসহ সবমিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন হোটেলের খবার বিলসহ আনুষঙ্গিক প্রায় সকল খরচই বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি বিল পাওয়া না গেলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পপতিদের থেকে কোন আর্থিক সহায়তা না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত এক নার্স জানান, গতকাল (রবিবার) দুই জন করোনা রোগীকে রামেক হাসপাতালে পাঠানোর পর রোগী শূন্য হয় জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিট। তবে রোগী না থাকলেও আজ (সোমবার) সকালে ওয়ার্ডের সকল রুম পরিস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও বেডের বিছানা, চাদরসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। যেকোনো সময়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে করোনা ইউনিট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, এই মূহুর্তে করোনা ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে করোনা ইউনিট। এমনকি করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আর্থিক সংকটে করোনা ইউনিট বন্ধ রাখার বিষয়টি স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ২০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ইউনিটে সোমবার পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। বর্তমানে জেলায় যে ৩৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন তারা প্রায় সকলেই ভালো আছেন এবং বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রায় ২০ লক্ষ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব শীগ্রই বিল পাওয়া যাবে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই যেকোনো মূহুর্তে করোনা ইউনিট চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার (০৬ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত জেলায় বর্তমানে ৩৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে রবিবারই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন ও সোমবার আরো ৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত ৮৬১ জন এবং করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৪ জন।